কালের খবরঃ
এতিম ও দুঃস্থ পরিবারের শিশুদের নিয়ে ঈদ উৎসব পালন করলেন গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন। নাচ গান আবৃত্তি নাটিকা চুটকি ও উন্নত খাবার পরিবেশেনের মধ্য দিয়ে এই ঈদুল আযহার আনন্দ ভাগাভাগি করা হয়। শেখ রাসেল দুঃস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুর্নবাসন কেন্দ্রের আয়োজনে ও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় ঈদের দিন (সোমবার) সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কমপ্লেক্স চত্বরে এই ঈদ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম নিজে মঞ্চে উঠে মাইক হাতে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষনীয় চুটকি উপস্থাপন করেন। পরে শিশুদের অনুরোধে তিনি গান পরিবেশন করেন। জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম যখন “আজ রঙে রঙে রঙিন হবো,রঙের হাওয়ায় ভেসে যাবো রঙের দুনিয়ায়, ভালোবাসায় দুটি প্রানে,রঙ ছড়াবো স্বপ্ন গানে, রঙের ছোঁয়ায় হারিয়ে যাবো শুধু দুজনায়”। এই গানের সুর তোলেন তখন অনুষ্ঠান স্থল করতালিতে মুখরিত ও নেচে ওঠে। জেলা প্রশাসকের গানের তালে তালে সবাই মুখে মুখে এই গানটি আওড়ান।
এর আগে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুর্নবাসন কেন্দ্রের নিবাসী বিভিন্ন বয়সের মেয়ে শিশুরা গান, নাচ, নাটক পরিবেশন করে অতিথিদের আনন্দ দেন। এছাড়া গোপালগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা নাচ গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করে ঈদ আনন্দ উৎসবকে মুখরিত করে তোলেন।
অতিথিরা শিক্ষার্থীদের সাথে আনন্দের ভাগিদার যেমন হয়েছেন তেমনি দুই শতাধিক এতিম ও দুঃস্থ শিক্ষার্থীদেরকে আনন্দ দিয়েছেন। এই কেন্দ্রের কেউ মা হারা কেউ বাবা হারা আবার অনেক শিশু মা বাবা দুইজনকেই হারিয়েছে। আত্মীয় স্বজন থাকলেও তারা বাড়ি না গিয়ে সারাদিন হুই হুল্লোড় করে কাটিয়েছে। ঈদের দিন তারা বাড়িতে পরিবার পরিজনের কাছে না গিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন গভীর রাত পর্যন্ত।
পরে এক নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। প্রায় তিনশ’ জনের জন্য আয়োজিত এই নৈশভোজে জেলা প্রশাসক,জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সহ অতিথিরা অংশ নেন। শিশুদের খাওয়ানো হয় পোলাও,মুরগীরোষ্ট,গরুর মাংস. ডিম,সফট ড্রিংস,দই ও মিষ্টি। আরে আগে দুপুরে খাওয়ানো হয় পোলাও, মাংস সেমাই , ডাল। পরে শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হয় ঈদ সালামী হিসেবে নতুন টাকা।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাশুড়িয়া গ্রামের মা বাবাহারা সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী লাবনী আক্তার বলেন, আমার বাবা ও মা ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে দুজনেই মারা যায়। এর পর থেকে হোমে এসে লেখাপড়া শিখছি। ঈদে আমি বাড়ি যাই না। এখানেই ঈদ উৎসব করি। এই ঈদে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনেক অনুষ্ঠান হয়েছে। ভালো ভালো খাবার দিয়েছে। প্রতিবছর অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর ডিসি স্যার ও অন্য স্যাররা আসায় আমাদের খুব ভালো সময় কেটেছে। সকাল থেকে উন্নত মানের খাবার খেয়েছি। বান্ধবীদের সাথে খেলাধুলা হাসিঠাট্রা করেছি। এই করতে করতে বাবা মা বা ভাই বোনদের কথা ভুলে গেছি।
প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শেণির অপর এক শিক্ষার্থী টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামের ভ্যান চালক লিটন মোল্লার মেয়ে মাসুমা আক্তার বলেন, এই ঈদ উৎসবটা আমার খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে বড় বড় স্যাররা আসছেন। আমি এতোটাই খুশী যা বলে বুঝাতে পারছিনা। ডিসি স্যার গান করেছেন তাতে আরো ভালো লেগেছে ।
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও টুঙ্গিপাড়ার শ্রীরামকান্দি গ্রামের সাইফুল সিকদারের মেয়ে মমতাজ খানম, মাদারীপুরের হাবীব বেপারীর মেয়ে শারমিন আক্তার,গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার দীঘারকুল গ্রামের সুমী আক্তার , উরফি নিচুপাড়া গ্রামের কেয়া খানম সহ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন,আজ আমাদের মনটা অনেক খুশী। এখানে থাকি । প্রতিবছর এখানে গান বাজনা হয় । সবার সাথে আনন্দে কাটাই । অন্যবারের তুলনায় এবারেরটা আরো অনেক সুন্দর হলো। কারন ডিসি স্যার , পুলিশ সুপার স্যাররা থাকায় । অন্যবারও এই রকম অনুষ্ঠান হয়। এবার বড় করে হয়েছে। প্রতিবছর যেন এই রকম হয় এই আশা করি।
তারা আরো বলেন, প্রতিবছর এখানে গীত করি। আমরা সবাই একটা পরিবারের মতো থাকি। অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু এবছর একটু ব্যতিক্রম। এতোবড় অনুষ্ঠান আগে হয়নি। আমরা সবাই আনন্দ পেয়েছি , খুব মজা করেছি।
এই ঈদ উৎসব অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার আল বেলী আফিফা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ নাজমুন নাহার,টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাঈনুল হক সহ জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সংবাদকর্মিগন উপস্থিত ছিলেন।
শেখ রাসেল দুঃস্থ শিশু প্রশিক্ষন ও পুর্নবাসন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক, শীলা সাহা বলেন, জেলা প্রশাসক সহ অন্যান্য অতিথিরাও এই দিনে মেয়েদের সময় দিয়েছেন। ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন এতে এই শিশুরা উৎসাহ পাবে। বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখবে। সর্বপরি এই সময়টা তারা খুবই আনন্দের মধ্যে কাটাতে পেরেছে।
পুলিশ সুপার আল বেলী আফিফা বলেন,এখানে এসে আমার অসাধারণ অনুভুতি হলো। এখানকার শিশুদের পরিবেশনা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। ঈদের দিন এমন একটি প্রতিষ্ঠানে এসে শিশুদের সঙ্গে ঈদ করা একটা ভ্যাগেরও বিষয়। ওদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পেরে খুব ভালো লেগেছে।
জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম ,শেখ রাসেল দুঃস্থ শিশু প্রশিক্ষন ও পুর্নবাসন কেন্দ্রর শিশুদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় আনন্দ ও উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নিবাসী শিশুদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ করতে পেরে আনন্দটা বর্ণিল হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের শিশুদের কর্মক্ষেত্র ও মানসিক বিকাশে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করবো। তিনি আরো বলেন প্রধানমন্ত্রী শিশু বান্ধব। শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এই কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ভবিষতেও আমরা ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে এই ধরনের আয়োজন করবো। পরে তিনি নিবাসী ২১৯জন শিশুর হাতে ঈদ সালামী হিসেবে নতুন টাকা তুলে দেন।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply