কালের খবরঃ
কি আর বলবো, কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যে আমি সর্বস্ব হারিয়েছি । হঠাৎ করে জলোচ্ছাস এসে ৭ফুঁট উঁচু ঘেরের পাড় তলিয়ে দিল। সেই সাথে পুকুরের সব মাছ ভেসে গেল। একথা বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো এই চাষী। আগামী ৭দিন পর মাছ ধরে বিক্রির চিন্তা ভাবনা করছিলাম। পুকুরে ৩/৪কেজি ওজনের রুই কাতলা ছিল। ভেবে ছিলাম কিছু মাছ বিক্রি করে খাবার কিনবো। তাতো ভেসে গেলো। আর আমাকেও ভাসিয়ে দিয়ে গেল। এ ক্ষতি আমি কি দিয়ে পোষাবো। ধারদেনা ও ধান বিক্রি করে ঘেরে মাছ চাষ করি। এই ঘেরের মাছ বিক্রি করে চলে সারা বছরের সংসার খরচ। এখন আমি কিভাবে চলবো আর কি করে বা দেনা প্ররিশোধ করবো তা বুঝতে পারছিনা। এসব কথা বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্থ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তাড়াইল গ্রামের মৎস্যচাষী দীনবন্ধু গাইন।
তিনি আরো বলেন, আমার ঘেরটি ৩৫ বিঘা জমির উপর। সারা বছর পরিবারের সবাই এবং শ্রমিক খাটিয়ে মাছ চাষ করে থাকি। মাছের পোনা ও খাবার খরচ বাবদ বছরে প্রায় ২৫থেকে ৩০লক্ষ টাকা খরচ লাগে। প্রতিবছর মাঘমাসে মাছ বিক্রি করে সব দায়দেনা মিটিয়ে দিই। আর যে লাভ হয় তা দিয়ে চলে আমার সংসার খরচ। সরকারের কাছে দাবী জানাই আমারা যাতে আবার মাছ চাষ করতে পারি সেই ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য।
একই গ্রামের অপর মৎস্যচাষী ভবসিন্দু গাইন। তিনি ১৭বিঘা জমিতে ঘের তৈরী করে মৎস্য চাষ করে আসছিলেন দীর্ঘ বছর। এবার পুকুরে ছিল রুই কাতলা, চিংড়িসহ কার্প জাতীয় বিভিন্ন ধরনের মাছ। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সোমবার (২৭মে) ভোর সাড়ে ৬টায় জলোচ্ছাস এসে পাড় তলিয়ে ভাসিয়ে দেয়। তিনি বলেন,রাতভর ছিলো প্রচন্ড বৃষ্টি আর বাতাস। রাত জেগে আমরা ঘের পাহারা দিতে থাকি। যে বৃষ্টি হচ্ছিল তাতে ঘেরের পাড় তলাতে আরো প্রায় ৫/৬ফুট পনি দরকার। হঠাৎ দেখি পানি ফুলে উঠে ধেয়ে আসছে। মূহুর্তের মধ্যে তলিয়ে গেল ৭ফুঁট উচ্চতার ঘের পাড়। মাত্র ২৫/৩০ মিনিটের মধ্যে পানিতে টইটুম্বুর হয়ে ভেসে গেল পুকুর পাড়টি। আর চোখের সামনে জলোস্রোতে চলে গেল ঘেরের সব মাছ। আমি নির্বাগ দৃস্টিতে শুধু তাকিয়ে দেখলাম। যে ক্ষতি হয়েছে তা পোষাতে অন্তত ১০বছর লেগে যাবে। আমি সরকার প্রধানের দৃষ্টি আকর্শণ করছি। তিনি যেন আমাদের উপর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
শুধু দীনবন্ধু ও ভবসিন্দু গাইনই নয় । ওই গ্রামের মৎস্যচাষী আরবিন্দু গাইনের ৯বিঘা , অর্চনা গাইনের ৪বিঘা , অমৃত গাইনের ৪বিঘা ও খোকন গাইনের ৩বিঘা জমির ঘের পানিতে তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া টুঙ্গিপাড়া উপজেলার প্রায় ১হাজার মৎস্যঘের পানিতে তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে বলে জানিয়েছেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মঈনুল হক। তিনি জানান ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে টুঙ্গিপাড়ায় অস্বাভাবিক জোয়ার ও বৃষ্টিপাতের কারনে ৪০০ ঘর প্লাবিত ও সহস্রাধিক মাছের ঘের ভেসে গেছে। প্রায় ৪০০ লোককে বাঁশবাড়িয়া হাই স্কুল, পাটগাতি স্কুল, সরদারপাড়া স্কুলে আশ্রয় দেয়া হয়। ১হাজারেরও বেশী মৎস্য ঘের পানিতে ভেসে যায়। তবে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপনের কাজ চলমান রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের মাঝে শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরন করে।
অপরদিকে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিনুর আক্তার জানান, বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ঘুরে যতটুটু দেখেছি সেটা হলো বেশকিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ও অসংখ্য গাছপালা ভেঙ্গে গেছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। দুই একদিনের মধ্যে তালিকা প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
অন্যদিকে, জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে আউস ধানের বীজতলা, শাকসব্জি ও পাটের জমিতে জলাবদ্ধতা সৃস্টি হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে । পরিমান নিরুপনে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।
জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, রিমালের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু গাছ পালা ভেঙ্গে পড়েছে। কাঁচাঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া নিন্মাঞ্চল হওয়ায় এই দুই উপজেলায় বেশকিছু পরিবার পানি বন্ধী হয়ে পড়ে। তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে এনে খাদ্যসহায়তাসহ সকল সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। এছাড়া হাজারও মৎস্যঘের পানির তোড়ে ভেসে গেছে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের দেয়া তথ্যে জানতে পেরেছি। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে কাজ করছে। তালিকা প্রস্তুত করে ঢাকায় পাঠানো হবে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply