রেজোয়ান আহমদ চৌধুরীঃ
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল ইউনিয়নের পরানপুর সহ ৬টি গ্রামকে বিভক্ত করে রেখেছে মধুমতি বাওড়। বাওড়ের এ পারে (উত্তর পাড়) পরানপুর এবং ওপারে (দক্ষিনপাড়ে)রয়েছে চরপরানপুর, চরপাচাইল, লংকার চরসহ ৬টি গ্রাম। এসব গ্রামের শিক্ষার্থী, ব্যাবসায়ী, কৃষকসহ সাধারন জনগনকে এই মধুমতি বাওড় খেয়া নৌকায় পার হয়ে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত ও হাটবাজারে যাতায়াত করতে হতো। এমন কি এ এলাকার সর্ববৃহৎ পশুর হাট পরানপুরে যেতে হলে এই বাওড় পার হয়ে অথবা ৮ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসা যাওয়া করতে হতো মানুষদের। এলাকাবাসী সরকারি বিভিন্ন জায়গা যোগাযোগ করে বা কোন সহায়তা না পেয়ে নিজেদের উদ্যোগে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ২শ ৬০ ফুট দৈর্ঘ ও ৬ফুট প্রস্থ্য একটি সাঁকো তৈরি করেছেন। ফলে মধুমতি বাওড় পাড়ের বাসিন্দাদের সাময়িক ভাবে দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, এলাকাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে শিগগিরই সেখানে একটি স্থায়ী ব্রীজ নির্মাণ করার।
কাশিয়ানী উপজেলার পরাণপুর গ্রামের বাসিন্দা একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া কলেজ ছাত্রী মিনা খানম বলেন, আগে স্কুল কলেজে যেতে হলে নদী পাড়ে বসে থাকা লাগতো। খেয়া নৌকা কখন পাড়ে আসবে অপেক্ষায় থাকতে হতো। অপেক্ষা করতে করতে অনেক সময় ঝড়বৃষ্টিতে আসতো। তখন ভেজা লাগতো। অনেক সময় নৌকা ডুবির কবলে পড়ে বইখাতা জামা কাপড় নষ্ট হয়েছে। যেদিন প্রাকৃতি দুর্যোগ হতো সেদিন আর স্কুলে যাওয়া হতো না। এখন এই সাঁকো হয়েছে নিশ্চিন্তায় বাড়ি থেকে বের হই। আবার কলেজ ছুটির পর স্বাচ্ছন্দে বাড়ি ফিরি। গ্রামবাসি সাঁকো তৈরী করাতে খুব সুযোগ সুবিধা হয়েছে। সকাল বিকেল প্রাইভেট পড়ার জন্য বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
পরানপুর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা মিনা বলেন, নিজেদের অর্থ স্বেচ্ছাশ্রম বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাঁকোটি নির্মান করা হয়েছে। গ্রামবাসী যে যার মতো সহায়তা ও বাঁশ কাঠ সরবরাহ করে এই সাঁকো তৈরীর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। সাকোঁ তৈরীতে মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪লক্ষ টাকা।
পরানপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন,মধুমতি বাওড়ে সেতু না থাকায় এতদিন নৌকায় পার হতে হয়েছে রাতইল ইউনিয়নের ৬ গ্রামের প্রায় ৬/৭ হাজার মানুষদের। সব থেকে বেশী ভোগান্তিতে ছিলেন অসুস্থ রোগী, শিক্ষার্থী ও কৃষকেরা। রোগী নিয়ে দ্রæত আমরা কোথাওযেতে পারতামনা। জমির ফসল ঘরে তুলতে খুব সমস্যা পোহাতে হয়েছে। হাট বাজারে যেতে আসতে খুব ভোগান্তীতে ছিলাম। এবার বোরো ঘরে তুলেছি এই সাকোঁ দিয়ে। আমরা এখন রাত দুপুর যে কোন সময় জরুরী কাজে বাড়ির বাইরেযেতে পারছি। আবার ফিরতে পারছি। তবে এটি স্থায়ী সমাধান না। আমাদের এই স্থানে একটা পাকা সেতু নির্মাণ হওয়া খুবই দরকার।
চরপরানপুর গ্রামের মহসিন মোল্লা, পরানপুর গ্রামের আসাদুজ্জামান দিপু, শিক্ষার্থী রাশেদ মিয়া ও সাহানুর খানমের সঙ্গে কথা হলে তারা এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। আপাতত আমারা কাঠের সাঁকো করেছি। তাতে খুব সুবিধা হচ্ছে। দুই পাড়ের উৎপাদিত কৃষিপন্য সহজে আনা নেয়া করতে পারছি। আগে নদী পাড়াপারের জন্য নৌকার জন্য অনেকসময় পাড়ে বসে থাকা লাগতো। কলেজে যেতে দেরি হতো। এলাকাবাসী সাঁকো তৈরী করায় সহজে পারাপার হতে পারছি। সময়মতো কলেজে যেতে পারছি। তাতে খুব উপকার হয়েছে।
তারা আরো বলেন ব্রীজের জন্য অনেক জায়গায় আবেদন করেছি কোন উপায় হয়নাই। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামবাসীর সহযোগীতায় ৬টি গ্রামের লোকজন পারাপারের জন্য সাঁকো করেছে। এতে সবার সুবিধা হচ্ছে। আমাদের আবেদন সরকার যেন আমাদের একটা স্থায়ী ব্রীজ করে দেয়।
চরপরানপুর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙ্গনের কারনে পরানপুর গ্রামের মানুষ দুইপাড়ে চলে গেছে। কাঠের সাঁকোটা হওয়াতে অসুস্থ রোগীদের দ্রুত পার করা যাচ্ছে। আগে নৌকার কোন ভালো ব্যবস্থা ছিলোনা। তাই বাধ্য হয়ে সমস্যায় থাকা গ্রামবাসীদের সাঁকো তৈরী করেছে। সরকারের কাছে দাবী এই ছয় গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে একটি স্থায়ী ব্রীজনির্মাণের।
রাতইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, সরকারি ভাবে অনেক চেষ্ট করেছি। কোন ভালো ফলাফল হয়নি। গ্রামবাসী সাঁকোটি নির্মান করায় দুই পারের মানুষের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরী হয়েছে। দুইপাড়ের মানুষের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। এই বন্ধন দীঘাস্থায়ী করতে পাকা ব্রীজের দাবী রয়েছে দুইপাড়ের বাসিন্দাদের।।
কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর বলেন, মধুমতি বাওড়ের কারনে কাশিয়ানীর পরানপুরে বিভক্ত হয়ে রয়েছে যুগযুগ ধরে। এটা একটি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান। দীর্ঘদিন ধরে অবেহেলিত রয়েছে। এই কারনে তাদের খুবই সমস্যা হচ্ছিল। সমস্যায় থাকা গ্রামবাসিরা নিজেদের উদ্যোগে একটি বাঁশ ও কাঠ দিয়ে পুল তৈরী করেছে। শুনে খুব ভালো লেগেছে । আশা করবো জনগুরুত্ব বিবেচনে করে এখানে একটি ব্রীজ নির্মানের ব্যবস্থা করবে সরকার বাহাদুর।
কাশিয়ানী উপজেলা প্রকৌশলী সজল কুমার দত্ত বলেন, অতিশিঘ্রই ওই স্থানে একটি পাকা ব্রীজ নির্মানের উদ্যোগ গ্রহনের জন্য স্থানীয় এমপি মুহাম্মদ ফারুক খান একটি ডিও লেটার দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। আশাকরি দ্রুততম সময়ে এখানে ব্রীজটি নির্মাণ করতে পারবো।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply