কালের খবরঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারলে, লন্ডনে বসে যে হুকুম দিচ্ছে (তারেক রহমান) তাকে দেশে ধরে এনে বিচারের মুখোমুখি করব। রেল পোড়ায়, বাস পোড়ায়, গাড়ি পোড়ায়, মানুষ হত্যা করে, আমাকে পর্যন্ত হত্যার চেষ্টা করেছে তারা। লন্ডনে বসে মানুষ হত্যার নির্দেশ আসছে। যারা অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করছে, খুনি, লম্পট, জুয়াড়ি তারেকের (তারেক রহমান) কথা শুনে যে বিএনপি নেতারা মানুষ খুন করছে, তার শাস্তি তারা পাবে। যারা এটা করছে, তাদের কি লাভ সেটাই আমার প্রশ্ন।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন না হওয়ার চক্রান্তের সমুচিত জবাব আমরা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেব। যাতে আর কেউ বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।”
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) নিজ নির্বাচনী এলাকায় টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “এখানে তারা তৃতীয় পক্ষকে ক্ষমতায় আনবে, এটাই তাদের লক্ষ্য।”শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ দেশের উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে পারবে না। সে যোগ্যতা তাদের নাই। বিএনপি খুনিদের দল আর জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের দল।”বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, “জাতির পিতার পলাতক হত্যাকারীদের রায় আমরা কার্যকর করব। বিদেশে যারা পালিয়ে আছে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে, যতো বাধাই আসুক।”
টুঙ্গিপাড়ার জনগণের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন,“আমার সব থেকে বড় শক্তি টুঙ্গিপাড়া বাসী। এখানে অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে চলতে হচ্ছে তারপরেও আপনারা (টুঙ্গিপাড়াবাসী) সব সময় আমাকে স্নেহ, ভালোবাসা, সমর্থন দিয়ে আগলে রেখেছেন। আমাকে শক্তি দিয়েছেন সাহস দিয়ে এই দেশের মানুষের জন্য কাজ করবার সুযোগ দিয়েছেন। সেই জন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়েরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল শেখের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর চাচা শেখ কবির হোসেন, গোপালগঞ্জ দুই আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল, শেখ জুয়েল, শেখ সারহান নাসের তন্ময়, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রতিনিধি শহীদুল্লাহ খন্দকার, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহাবুদ্দিন আজম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সাইফুল ইসলাম সহ অভিনেত্রী তারিন ও অভিনেতা মীর সাব্বির বক্তব্য রাখেন।
অপরদিকে একই দিন দুপুর ২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়ায় দ্বিতীয় জনসভা করেন। কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ কলেজ মাঠে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জাতির পিতা এই বাংলাদেশকে শুধু স্বাধীনাতা এনে দেন নাই, মুক্তির পথও দেখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধপরাধীদের বিচার শৃরু করেছিলেন, সেই বিচার বন্ধ করে দেয় জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে তাদেরকে বিভিন্ন দুতাবাসসহ বড় বড় পদে চাকুরী দিয়েছিল। আমরা দু’বোন বিদেশে ছিলাম রিফুজি হয়ে, আমাদের দেশে আসতে দেয়নি জিয়াউর রহমান, রেহানার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছিল, জিয়াউর রহমান সেটি রিনু পর্যন্ত করতে দেয়নি। আমি জিয়াউর রহমানের দেয়া ইন্ডেমনিটি বাতিল করে খুনিদের বিচার করেছি। ২০০৮ সালে বিচারের রায় কার্যকর করেছি। আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন বলেই আমি পেরেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, রাখে আল্লাহ মারে কে ? এই কোটালীপাড়ায় ৭৬ ও ৮৪ কে ওজনের ২ টি শক্তিশালী বোমা পুঁেত রাখা হয়েছিল। সেদিন ওই বোমা বিষ্ফোরন হলে কোটালীপাড়াবাসী নিশ্চহ্ন হয়ে যেত। এত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেখতে পেলোনা, কিন্তু একজন চায়ের দোকানদার কেটলী ধুতে গিয়ে বোমার তার দেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সংবাদ দিলেন। পরে বোমা উদ্ধার করা হয়। সেদিন আমাকে এবং কোটালীপাড়া বাসীকে আল্লাহই রক্ষা করেছেন। আমি সেই চায়ের দোকানদারের প্রতি কৃতজ্ঞ।
আওয়ামীলীগ সভানেত্রী বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বানিয়েছি, বিনা পয়সায় স্কুলে স্কুলে ল্যাব স্থাপন করে কম্পিউটার দিয়েছি। আমরা ৩ কোটি ৯৪ লক্ষ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দিচ্ছি। নারীদের কর্ম-সংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষকদের মর্যাদা দিয়েছি. বেতন বৃদ্ধি করেছি, প্রশিক্ষন দিয়েছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে জনগনের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দিচ্ছি। আমরা ভুমিহীনদের ২ শতক জমিসহ গৃহ নির্মান করে দিয়েছি, দেশের ৩৩ জেলা ইতিমধ্যে ভুমিহীনমুক্ত ঘোষনা করেছি। পর্যায়ক্রমে এই ব্ংালাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবেনা।
তিনি আরো বলেন, কাটালীপাড়ার মানুষের এক সময়ে কাজের ও যাতায়াতের কোন সুযোগ ছিলনা। সব করে দিয়েছি, বাকি যা আছে তাও করে দেব। এইভাবে আমরা পুরো দেশটাকে এগিয়ে নিতে চাই। কোভিড-১৯ এর সময়ে আমরা বিনামূল্যে টিকা দিয়েছি. যা পৃথিবীর কোন ধনী দেশ দিতে পারেনি। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মান করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি। এখন দিনে দিনে ঢাকা গিয়ে আবার ফিরে আসা যায়। আমরা সুপেয় পানি পানের ব্যবস্থা করেছি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা করে দিয়েছি। কোন জমি অনাবাদী রাখা যাবেনা। উৎপাদান বৃদ্ধি করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন. জিয়ার আমলে মুক্তিযোদ্ধারা পরিচয় দিতে ভয় পেত। এখন মুক্তিযোদ্ধারা বুক ফুলিয়ে তাদের পরিচয় দিতে পারেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করেছি, তাদেরকে বীর নিবাস করে দিয়েছি।
কোটালীপাড়ার ভোটরদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেনতো ? আপনারা আমার নির্বাচন করে দেন, আর আমাকে দেখতে হয় ৩০০ আসন। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে কাজ করার সুযোগ করে দেবেন।
নতুন ও তরুন ভোটারদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথম বারের ভোট যেন ব্যর্থ না হয়, বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে তারুন্যের শক্তি কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটি উন্নত জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।
বিএনপি আগুন সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়েছে, বাসে, ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে. নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে। এগুলি বন্ধ করতে হবে, যারা এগুলি করছে তাদেরকে ধরিয়ে দিতে হবে। আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশিতাকে দেব এটি আমাদের ¯েøাগান. ভোট ও ভাতের অধিকার সবার রয়েছে। নির্বাচন নিয়ে যরা ষড়যন্ত্র করে আমরা তাদের দেখে নিব বলে হুশিয়ারী দেন প্রধানমন্ত্রী।
কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ও সাবেক সিনিয়র সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান হাওলাদার, গোলাম কিবরিয়া দাড়িয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ এম অহিদুল ইসলাম, হাজী কামাল হোসেন শেখ, আমিনুজ্জামান খান মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক মতিয়ার রহমান হাজরা, আওয়ামী লীগ নেতা কমল চন্দ্রসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন খান, ইউপি চেয়ারম্যান মাজাহারুল আলম পান্না, যজ্ঞেশ^র বৈদ্য অনুপ, শ্রমিক লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম তালুকদারসহ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ বলেন, সম্পূর্ণ নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে আজকের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িতে জাতীয় পতাকার পরিবর্তে ছিল দলীয় পতাকা।
গভায় প্রধানমন্ত্রীর ছোটবোন শেখ রেহানা, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপি, বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সাধারন সম্পাদক জি এম সাহাবুদ্দিন আজম, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ আয়নাল হোসেনসহ কোটালীপাড়া উপজেলার ভিবিন্ন অংগ-সংগঠনের নেতাকর্মী ও লক্ষাধিক ভোটার উপস্থিত ছিলেন।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply