কালের খবরঃ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মধন্য গোপালগঞ্জে ‘মুজিবঃ একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।সিনেমাটি দেখার জন্য নানান বয়সের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ হলে এস ভিড় করছে।ছবি দেখে অনেকে চোখের পানি মুছতে মুছতে হল থেকে বের হচ্ছে।
‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’, সিনেমাটি গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মণি স্মৃতি মিলনায়তন ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে দেখানো হচ্ছে।মানুষের উপচেপড়া ভিড় সামলাতে কর্তৃপক্ষকে বেগ পেতে হচ্ছে। ঐতিহাসিক এই সিনেমাটিকে কেন্দ্র করে মিলনায়তন আঙিনায় সিনেমা ও বঙ্গবন্ধুপ্রেমী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বিশেষ করে স্কুল কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থী ভিড় লক্ষ্যনীয়। এসব হলে দিনে দুইটি করে শো চালানোর কথা থাকলেও মানুষের চাপে তিনটি করে শো চালানো হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে সিনেমাটি (১৩ অক্টোবর) শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) মুক্তির পাওয়ার প্রথম দিনে দুইটি করে শো চালানো হয়। এর পর থেকে মানুষের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় তিনটি করে শো চালানো হচ্ছে। প্রতি শোতে গোপালগঞ্জ শেখ ফজলুল হক মণি স্মৃতি মিলনায়তনে সাড়ে সাতশ সিটের বিপরীতে প্রায় ৯শ এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে তিনশ সিটের বিপরীতে প্রায় ৪শ মানুষ সিনেমাটি উপভোগ করছেন। শুক্রবার থেকে রবিবার রাত ৯টা পর্যন্ত প্রায় ১০হাজার দর্শক এই সিনেমাটি সম্পুর্ন ফ্রিতে দেখেছেন। সারা দেশে টিকিট কেটে সিনেমা দেখলেও গোপালগঞ্জে কোন টাকা নেয়া হচ্ছে না। কারন এটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মধন্য জেলা। তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটি ফ্রি করা হয়েছে।
রবিবার (১৫ অক্টোবর) গোপালগঞ্জ শেখ ফজলুল হক মণি স্মৃতি মিলনায়তন ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা মিলনায়তন ঘুরে দেখা গেছে, ২টি হলের মধ্যে ৩টি করে শো চলছে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা, দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা ও সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাত ৯টায় শো চলানো হচ্ছে। সিনেমা দেখতে জেলা,উপজেলা ও গ্রামের সিনেমা ও মুজিবপ্রেমী অসংখ্য শিক্ষার্থী, নারী, পুরুষ শিশু তরুণ-তরুণী ও বধুরা ছুটে এসেছেন। কেউ কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন ঐতিহাসিক এই সিনেমা দেখতে।
রবিবার দুপুর ২ টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সিনেমা দেখতে আসা গোপালগঞ্জ শহরের নবীনবাগ এলাবার বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, হলে গিয়ে সিনেমা দেখিনা প্রায় ২০ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে সিনেমা দেখানো হবে শুনে লোভ সামলাতে পারেননি । ছবিটি দেখলাম। দেখে খুব ভালো লেগেছে। কিছু কিছু দৃশ্য দেখেচোখে পানি চলে আসে। আমি বলবো এই সিনেমাটি যেন সবাই দেখে।সিনেমাটি পরিবার পরিজন নিয়ে দেখার মতো একটি ছবি।
এদিন শেখ ফজুলুল হক মণি স্মৃতি মিনায়তনে গোপালগঞ্জ শহরের শেখ হাসিনা স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস এসেছিলেন সিনেমা দেখতে। তিনি বলেন, দাদা দাদী ও মা বাবার কাছে লেখাপড়ার অবসরে বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। সেসব গল্পের সাথে এই সিনেমাটির অনেক মিল খুজে পেলাম। আমার মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে একটি বাস্তব ধারনা সৃস্টি হয়েছে। যা আমাদের আগামী দিনে খুবই উপকারে আসবে।
সিনেমা দেখতে এসেছিলেন একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী শুভেচ্ছা বিশ্বাস, অষ্টম শ্রেণির মিসতিনা ইসলাম। জেলা প্রশাসন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র দিব্য রায়,গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র মোঃ আরিফুল ইসলাম ও মোঃ সাদিক সিদ্দিকীসহ প্রায় হাজার দর্শক। তারা বলেন, একটি অসাধারণ সিনেমা হয়েছে । আমরা শুধু পরিবার বা শিক্ষকদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জেনেছি। এখন সিনেমার মাধ্যমে বাস্তবটা জানতে পারলাম। এই সিনেমাটি দেশের সকল মানুষের দেখা উচিৎ।
গোপালগঞ্জ শহরের শিক্ষক অনিমেষ পাল সজীব বলেন,বঙ্গবন্ধুর বেড়ে ওঠা, লড়াই সংগ্রাম করে নেতা হওয়া ও জাতির জনকে রূপ নেওয়া, একটা দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে এই ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে।তাই আমি মনে করি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরাধিনতা থেকে মুক্তি,বাংলাদেশের সৃষ্টি ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। বিনামূল্যে সিনেমাটি দেখার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
গোপালগঞ্জ জেলা উদীচীর সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, বাংলার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গলী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন কাহিনী নির্ভর এই সিনেমাটি দেখে বঙ্গবন্ধুর অনেক অজানা অধ্যায় আমরা এবং নতুন প্রজম্ম জানতে পেরেছি। এখনে বঙ্গবন্ধুর লড়াই সংগ্রামের অনেক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এসব তথ্য নির্ভর ছবি দেখে নতুন প্রজম্মের মধ্যে দেশত্ববোধ জাগ্রত হবে এবং সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।
গোপালগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির জেলা কালচারাল অফিসার ফারহান কবীর সিফাত বলেন,গোপালগঞ্জের দুইটি স্থানে সিনেমাটি দেখানো হচ্ছে। দুইটি মিলনায়তনে সিট সংখ্যা একহাজার ৫০টি। সিটের বেশী দর্শক উপস্থিত হওয়ায় হলের ফাঁকা সিড়িতে (ফুটপাত) বসে দর্শকরা সিনেমাটি উপভোগ করছেন। ছবিটি দেখার সময় কোন কথাবার্তা বা হইহুল্লো নাই। সবাই আগ্রহ ভরে ছবিটি দেখছেন। এখানে ছবি দেখতে নানান বয়সের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আসছেন।মাঝে মধ্যে মানুষের চাপে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, প্রথম দিন থেকে সিনেমাটি দেখার আগ্রহ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ হল মুখি।আমরা সিনেমাটি সম্পুর্ন ফ্রিতে সৌজন্য টিকিটের মাধ্যমে দেখানোর ব্যবস্থা করেছি।বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজোড়িত গোপালগঞ্জে সিনেমাটি ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে দেখছে মানুষ। প্রতিদিন দর্শক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৩ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত এই সিনেমাটি গোপালগঞ্জবাসীর জন্য ফ্রিতে দেখানো হবে। দর্শকসংখ্য বিবেচনা করে এই সময়টি আরো বাড়ানো হতে পারে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply